কক্সবাজারের রামু উপজেলার থিমছড়ি ও বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তবর্তী অঞ্চল দিয়ে প্রতিদিনই রহস্যজনকভাবে মিয়ানমার থেকে আসছে হাজার হাজার চোরাই গরু, ইয়াবা, আইস ও নানা ধরনের চোরাচালানি পণ্য। রাখাইন রাজ্যের সীমান্ত অতিক্রম করে এসব অবৈধ চালান আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। একই সময়ে বাংলাদেশ থেকেও চাল, ডাল, ওষুধসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী পাচার হয়ে যাচ্ছে রাখাইনে।
মিয়ানমারের ভেতরে সরকারি বাহিনী ও বিদ্রোহী সংগঠন আরাকান আর্মির মধ্যে তীব্র সংঘাত চললেও সীমান্তপথে চোরাচালান অব্যাহত রয়েছে। বৈধ পথে গরু আমদানি দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় চোরাকারবারিরা এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে অবৈধ বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। প্রতিরাতে শত শত চোরাই গরু সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে; পাশাপাশি আসছে ইয়াবা, আইস, অস্ত্র ও বিভিন্ন অবৈধ পণ্য।
এই চোরাচালান নেটওয়ার্কের নেতৃত্ব দিচ্ছেন এক আত্মঘোষিত সাংবাদিক, 'গডফাদার' খ্যাত আব্দুর রাজ্জাক। নাইক্ষ্যংছড়ি ও থিমছড়ি এলাকার কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ও সন্ত্রাসী গ্যাংয়ের মাধ্যমে তিনি এই অবৈধ ব্যবসা পরিচালনা করছেন। কোটি কোটি টাকা প্রতিদিন হুন্ডির মাধ্যমে পাচার হচ্ছে। আব্দুর রাজ্জাকের ছত্রছায়ায় সক্রিয় রয়েছে নাইক্ষ্যংছড়ি ও থিমছড়ির অসাধু ব্যবসায়ী ও সন্ত্রাসী চক্র, যাকে শহর থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে।
ব্যবসায়ীরা চোরাই পথে বিশাল আকারে অবৈধ ব্যবসা পরিচালনা করছে, আর তাদের এই তৎপরতায় আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছে স্থানীয় সন্ত্রাসী গ্যাংগুলো। অন্যদিকে আব্দুর রাজ্জাক নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে সমস্ত চোরাচালান ও অবৈধ কর্মকাণ্ডের দায় সাধারণ মানুষের ওপর চাপিয়ে দিয়ে মিথ্যা সংবাদ তৈরি করছে। এসব ভুয়া প্রতিবেদন মুহূর্তেই ছড়িয়ে দিচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়, যাতে প্রকৃত অপরাধীরা আড়ালে থেকে যায় আর নিরীহ মানুষ হয় হয়রানির শিকার।
আব্দুর রাজ্জাকের গড়ে তোলা শক্তিশালী সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কেউ সাহস করে প্রশ্ন তুললে, তাকে চুপ করিয়ে দিতে নীলনকশা আঁকা হয়। তার নিয়ন্ত্রিত চিহ্নিত সন্ত্রাসী গ্যাংয়ের সদস্যদের মাধ্যমে গোপনে হত্যা বা গুমের মতো ভয়ঙ্কর কাজ সংঘটিত হয়। ফলে পুরো এলাকায় ভীতিকর ও আতঙ্কের পরিবেশ বিরাজ করছে, যেখানে কেউ মুখ খুলতে সাহস করে না।
আব্দুর রাজ্জাক যেন এক নিখুঁত নাটেরগুরু। প্রকাশ্যে নিজেকে সাংবাদিক পরিচয়ে তুলে ধরলেও, গোপনে তিনি এক ভয়ংকর হিংস্র ও বর্বর সাইকোপ্যাথ। একবার তার বিরুদ্ধে মাদক সেবনের গুরুতর অভিযোগ উঠেছিল। সে সময় তিনি বেপরোয়া ভঙ্গিতে দাবি করেন, "আমি ইয়াবা সেবন করি না, আমি ইয়াবা সেবন করাই!" বাস্তবতা হলো, আব্দুর রাজ্জাক নিজে ইয়াবা সেবন না করলেও, তার স্ত্রী নিয়মিত ইয়াবা সেবন করেন বলে জানা গেছে। অন্যদিকে তিনি নিজে তরল জাতীয় মাদকদ্রব্য (মদ) সেবনে আসক্ত। এই দ্বিমুখী জীবনযাপন তাকে সমাজের কাছে আরও রহস্যময় ও আতঙ্কজনক করে তুলেছে।
এই হিংস্র সাইকোপ্যাথ আব্দুর রাজ্জাক একাধারে চাঁদাবাজ, মানব পাচারকারী, পতিতা ব্যবসায়ী, অস্ত্র ব্যবসায়ী, ইয়াবা ও আইস ব্যবসায়ী এবং সীমান্তপথে চোরাই গরু পাচার সিন্ডিকেটের গডফাদার। পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে রয়েছে জাল নোট তৈরি ও জালিয়াতির মতো গুরুতর অভিযোগ। তার অপরাধের বিস্তৃতি এতটাই ভয়াবহ যে, তার নাম প্রায় সব ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত হয়ে গেছে। তার সিন্ডিকেট সারা দেশে এক ভয়ানক ভীতির পরিবেশ সৃষ্টি করেছে এবং দিন দিন এই অপরাধের বিস্তৃতি বেড়েই চলেছে।
তদন্তে জানা গেছে, আব্দুর রাজ্জাক সমাজের নানা স্থানে ভুয়া নিউজের ভয় দেখিয়ে মানুষকে জিম্মি করে রাখে, যাতে কেউ তার বিরুদ্ধে প্রশ্ন তুলতে সাহস না করে। তার এই চতুর কৌশল তাকে একপ্রকার অনির্বাচিত শাসক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে, যেখানে ভুয়া সংবাদ পরিবেশন করে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে অর্থ আদায় করা হয়। তার ভুয়া সাংবাদিকতা ও চাঁদাবাজির জন্য মানুষ তাকে ভুয়া সাংবাদিক ও চাঁদাবাজ রিপোর্টার হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
তিনি প্রায় ৭-৮ বছর ধরে মানব পাচারের সঙ্গে সরাসরি জড়িত। তার নেতৃত্বাধীন গ্যাং পরিকল্পিতভাবে নিরীহ মানুষকে মালয়েশিয়া পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে, দীপ উপকূলীয় অঞ্চলে আটকে রেখে মারধর ও নির্যাতন করে। পরে তাদের স্বজনদের কাছ থেকে মুক্তিপণের টাকা আদায় করা হয়। এই প্রক্রিয়ায় দীর্ঘ সময় ধরে মানব পাচার চালিয়ে আসছেন তিনি।
দেশের ভেতরে ও বাইরে দীর্ঘদিন ধরে তিনি পতিতা ব্যবসাও চালিয়ে যাচ্ছেন। এই ব্যবসার প্রধান পরিচালকের ভূমিকা পালন করছে তার স্ত্রী, যিনি সরাসরি এই অবৈধ কর্মকাণ্ড তদারকি করেন।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সরকারি বাহিনী ও বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান বাহিনীর মধ্যে চলমান সংঘাতের সুযোগ নিয়ে, আব্দুর রাজ্জাক বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সঙ্গে গরুর বিনিময়ে অস্ত্রের লেনদেন করে আসছেন। এই অস্ত্র ব্যবসায় তার প্রধান সহযোগী সরওয়ার জাহানের নেতৃত্বে থিমছড়ির একটি চিহ্নিত সন্ত্রাসী গ্যাং সক্রিয় রয়েছে।
আব্দুর রাজ্জাক একইসঙ্গে জাল টাকার বিশেষ কারিগর। তিনি জাল টাকা দিয়ে ইয়াবা, আইস এবং স্বর্ণ নিয়ে আসার নীলনকশা বাস্তবায়ন করেন। তার নেতৃত্বে থাকা সন্ত্রাসী গ্যাং বীরের বেশে মিয়ানমার থেকে ইয়াবা এনে জাল টাকার বিনিময়ে।
সীমান্ত ফাঁকি দিয়ে আসা হাজার হাজার গরু ও মহিষ তার অধীনে থাকা সন্ত্রাসী গ্যাং দ্বারা পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশের বাজারে সরবরাহ করা হয়। এই অবৈধ পাচারের পেছনে রয়েছে তার শক্তিশালী ও সুসংগঠিত সিন্ডিকেট, যা দেশের বিভিন্ন সীমান্ত এলাকায় সক্রিয়ভাবে কাজ করছে।
যদি কেউ আব্দুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে বা তার অপকর্মের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়, তখন তার হিংস্র সাইকোপ্যাথ চরিত্র প্রকাশ পায়। শহর থেকে রিমোট কন্ট্রোলের মতো প্রতিশোধপর্ব পরিচালনা করা হয়। যতক্ষণ না পর্যন্ত প্রতিপক্ষকে সম্পূর্ণরূপে নিশ্চিহ্ন করা হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত থেমে থাকে না সে। এ সময় আব্দুর রাজ্জাক মদপান করে মাতাল অবস্থায় গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকে, এবং একের পর এক নির্মম পরিকল্পনা আঁটে।
সাধারণ মানুষের দাবি
চাঁদাবাজি, অস্ত্র ব্যবসা, মানব পাচার, মাদক ও পতিতা ব্যবসার মতো জঘন্য অপরাধে জড়িত আব্দুর রাজ্জাককে সাধারণ মানুষ একজন দেশদ্রোহী এবং বাংলাদেশের কলঙ্ক হিসেবে চিহ্নিত করেছে। কক্সবাজারের নাইক্ষ্যংছড়ি, থিমছড়ি এবং মিয়ানমার ঘেঁষা পুরো সীমান্তবর্তী জনপদ আজ রাজ্জাক বাহিনীর সন্ত্রাস ও দখলে আতঙ্কিত। স্থানীয় জনগণের একটাই দাবি—এই চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসী বাহিনীকে দ্রুত দমন করতে হবে।
চেক জালিয়াতি, নারীদের ধর্ষণ, পরিকল্পিত খুনসহ একের পর এক ঘৃণ্য অভিযোগে অভিযুক্ত সাইকোপ্যাথ আব্দুর রাজ্জাক।
নিউজ ডেস্ক || বুলেটিন টিভি
0 Comments